আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা
খুঁটির জোর কোথায়?
সমবায় সমিতির নামে পুরো ব্যাংকিং নিয়মে দাপিয়ে সুদের ব্যবসা পরিচলনা করছে
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় আরডিপি। যুবক-ডেসটিনি চেয়ে লোভনীয় লভ্যাংশ
প্রদানের নামে প্রচার-প্রচারনায় এগিয়ে আরডিপি। সমবায় সমিতির আইনকে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করার বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই
জানা নেই স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। আমানতকারীরা তাদের মূল
সঞ্চয় ফেরত নিতে গিয়ে শতকরা ৫০/৫৬ ভাগ টাকা সংশ্লিষ্ট সমিতির কর্তারা
কর্তন করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। আমানতকারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ আদৌ ফেরত
পাবেন কিনা তা নিয়ে সঙ্কিত হয়ে পড়ছে। সমবায় সমিতির নীতিমালা উপেক্ষা করে
ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করছে আরডিপি। সরকারের মাইক্রোক্রেডিট
রেগুলেটরি অথরিটি সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করায় ব্যাঙের ছাতার মত গজে ওঠা
সমবায় সমিতিগুলো সমবায় অফিস থেকে সনদ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম পরিচালনা
করছে। দশমিনা উপজেলার নলখোলা বন্দরে বিলাস বহুল ভবনের চতুর্থ তলায় ২০১০
সালে নভেম্বর মাসে আরডিপির নামে একটি প্রতিষ্ঠান সমবায় সমিতির কার্যক্রম
পরিচালনা করছে। প্রায় দু'বছর ধরে সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম
পরিচালিত হলেও সেখানে সার্টবোর্ড দেখা যায়নি। লিফলেটে দারিদ্র বিমোচন
ভিশন ২০২১ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগান সম্বলিত আরডিপি ফাইন্যান্স
এন্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিঃ শরী'আহ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমবায়
কর্র্তৃক অনুমোদনের কথা উল্লেখ থাকলেও রেজিষ্টেশন নাম্বর উল্লেখ নেই।
সমবায়ের সংকেতিক অক্ষর বিহীন রেজি নংÑ০১১ লিফলেটে সিল মেরে প্রচারের জন্য
বিলি করে থাকে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সাধারন মানুষের কাছ থেকে আমানত
হিসাবে সংগ্রহ করছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ব্যাংকিং নিয়মে ক্ষুদ্র ও মাঝারি
ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা (এমএমই) মুদারাবা সঞ্চায়ী , দৈনিক, সাপ্তাহিক মাসিক
শিক্ষা, হজ্ব সঞ্চয় প্রকল্প, মাসিক লভ্যাংশ ভিত্তিক মেয়াদি, দ্বিগুন,
তিনগুন , স্পেশাল বন্ড, ল্যান্ড বন্ড ও লাখপতি বন্ড প্রকল্প নামে
গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। সেক্ষেত্রে দ্বিগুন
তিনগুন লভ্যাংশ ও লাখপতি বন্ড মতো লোভ দেখানো হচ্ছে। একই ভবনে দেখা গেছে
জয়েন্ট ইসলামী এমসি লিঃ নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান একই নিয়মে সাধারন
মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সগ্রহ করছেন। ২০১০ সালে ১মে জয়েন্ট ইসলামী
এমসিএস এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১হাজার ২শর অধিক তাদের সদস্য রয়েছে। সঞ্চয়
আদায় করেছে ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৫টাকা। ঐ প্রতিষ্ঠানের শাখা ব্যাস্থাপক আঃ
হামিদ বলেন ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তাদের সংস্থার কার্যক্রম চলছে। বিভাগীয়
সমবায় অফিস থেকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারী সমবায় নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম
পরিচালনা করায় সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এ প্রসঙ্গে হামিদ
বলেন, বর্তমানে জয়েন্ট ইসলামী ফাইন্যান্স এন্ড কর্মাস লিঃ নামে কার্যক্রম
পরিচালিত হচ্ছে। এখানে সমবায় কিংবা সমাজসেবার কোন অনুমোদন ছাড়াই পুরো
ব্যাংকিং নিয়মে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আরডিপির দশমিনা শাখার দায়িত্ব
প্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাসুদ বলেন, তাদের কোম্পানির ৩৬টি শাখা
একই নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। এ কোম্পানির কোথায় থেকে অনুমোদন নিয়েছে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, গনপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দিয়েছে। খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, আরডিপির প্রধান অফিস ছিল ৫৫/এ, পুরান পল্টন, সিদ্দিক
ম্যানশনের ৮ম তলায়। বর্তমানে ৩২, পুরানা পল্টন, সুলতান আহমেদ প্লাজার ৯ম
তলায়। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পঞ্চজ কুমার চন্দ এ প্রতিনিধিকে বলেন
,আরডিপির কার্যক্রম ব্যাংকিং নিয়মে চলছে, আমার এদের বিরুদ্ধে লেখা-লেখি
ছাড়া আর কিছুই করার নাই। সম্প্রতি জয়েন্ট ইসলামীর বিরুদ্ধে শাখার বন্ধের
নির্দেশ দিলেও বহাল তবিয়তে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। কাগজ পত্র
চেয়ে গত ২২ মার্চ আরডিপিকে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত ঐ অফিসের কেউ যোগাযোগ
করেনি। ঐ সংস্থায় চরহোসনাবাদ এলাকার সোহাগ ও কামাল আমানতের টাকা ফেরত
আনতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তারা শতকরায় ৫৬ ভাগ টাকা কর্তন করার শর্ত জুরে
দেয়ায় টাকা উত্তলন করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন। উপজেলায় সদর বাজারের
সাহাবুদ্দিন টেইলার্স তার আমানতের টাকা ফেরত আনতে গিয়ে শতকরা ১৪ ভাগ টাকা
কর্তন করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আরডিপির শাখা ব্যাবস্থাপকের
মতামত জানতে ফোন করা হলে এ প্রতিনিধির সাথে অসৌজন্যমূলক আচারন করা হয়।
বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক অঞ্জন কুমার সরকার এ
প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা ও জেলা সমবায় অফিসারের আরডিপির কার্যক্রম
ব্যাংকিং নিয়মে করার তদন্ত প্রতিবেদনসহ সুপারিশ করেন। আমি কারণ দর্শানের
জন্য আরডিপির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ প্রদান করি। আজ পর্যন্ত আরডিপির
কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি। তবে আরডিপির বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তা
মৌখিকভাবে জানান, তাদের কর্যক্রম পরিচালনার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করে
স্থিতি বর্জায় রাখার নির্দেশ আনেন। ঐ কাগজ চাওয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত
দেননি। দশমিনা উপজেলায় ইতিমধ্যে ভুয়া এনজিও কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
হয়ে গেছে। আমানতের দ্বিগুন তিন গুন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা ঋন
প্রদানের নামে অর্থ আদায়ের পর প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা ভাড়াটে অফিস
তালাবদ্ধ করে গা-ডাকা দিলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে কোন
পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। সন্ধান, যুবক, ডেসটিনি, আর্থ ফাউন্ডেশন, হেলপ্
দ্যা ডিসটেন্স, হেপী, জনউন্নয়ন সংস্থা(আর্ডকো)র মত ২০/২৫টি সংস্থা কোটি
কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। এসব এনজিও গ্রাম-গঞ্জের সাধারন
মানুষের আমানতের টাকা, চাকরী দেয়ার নামে তরুন/তরুনীদের জামানতের টাকা
নিয়ে পালিয়ে যায়।