Contact us

Adhikar by Journalist Faiyz Ahmed
অধিকার

স্থানঃ সনি কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী নির্মানাধিন ভবন।
কতিপয় শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে থাকবে
রেজা কতিপয় শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল করতে
করতে মঞ্চে প্রবেশ।

রেজাঃ দুনিয়ার মজদুর (সবাই এক সাথে) 'একহও' লড়াই কর। একহও লড়াই কর।
(দুনিয়ার মজদুর মঞ্চে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বজ্রকন্ঠে মুহুরমুহু মিছিল চলতে
থাকবে। রেজা মাইকের সামনে গিয়া) আপনারা সবাই মিছিল বন্ধ করুন এবং
ধৈয্যধরে বসুন। এখন আপনাদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন- বিশিষ্ট
শ্রমিক নেতা আন্দোলনের পথিকৃত জনাব শুক্কুর আলী।

শুক্কুর আলীঃ শ্রমিক ভাইয়েরা, আমার সংগ্রামী শুভেচ্ছা নিবেন। আজ আমরা
এখানে সমবেত হয়েছি একটি মাত্র উদ্দেশ্যে, আর তা হচ্ছে- আমরা শ্রমিক জন্ম
থেকেই নানা ভাবে মালিক এবং ঠিকাদারদের হাতে জিম্মি হয়ে আছি। আমরা একটানা
১৮ঘন্টা শ্রম বিনিময় করেও মালিকের মন জয় করতে পারি নাই, পাই নাই আমরা
আমাদের ন্যায্য অধিকার, এমনকি আমরা আমাদের ন্যায্য মজুরীও চাইতে পারিনা।
তা হলে আমাদের উপর নেমে আসে জুলুম, নির্যাতন। তাই আমাদের দাবী না মানা
পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এখন আপনাদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন-
আমাদের শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা, শ্রমিক জনতার বন্ধু,
শ্রমিকদের প্রাণ প্রিয় নেতা জনাব- রেজা আহম্মেদ।

রেজা ঃ উপস্থিত শ্রমিক ভাই ও বোনেরা আপনারা আমার সালাম নিবেন। আজ অত্যন্ত
দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয় আমাদের মত শ্রমিকদের ঐ পরার্থলোভী মালিক,
ঠিকাদাররা আমাদের পশুরমত খাটাতে অবস্ত হয়ে পরেছে। ওরা আমাদের কখনই মানুষ
মনে করে না। দৈনিক ১৬/১৮ ঘন্টা হার ভাঙ্গা খাটুনির পরেও আমরা আমাদের
পাওনা টাকা তাদের কাছে জোর দিয়া চাইতে পারি না। তাহলে আমাদের উপর নেমে
আসে অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন। তাই ঐ মানুষরূপী নরপশুদের হিংস্রথাবা
থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে চাই এবং আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা আমাদের
দৈনিক ৮ঘন্টা শ্রম ও এর ন্যায্য মজুরী আদায় করে নিতে চাই। আপনারা মনে
রাখবেন। গরীব অসহায়দের কেউ কোন দিন অধিকার দেয় না বরং, আদায় করে নিতে হয়।
তাই বল ছিলাম আমাদের এই অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আপনরা কি আমার সাথে আছেন।
(সকলে সমস্বরে) রেজা ভাই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে। আগামী ১সপ্তাহের
মধ্যে যদি আমাদের সকল দাবী মানা না হয় এবং আর কোন শ্রমিক নির্যাতনের
স্বীকার হয়, তবে আমরা শ্রমিকরা সম্পূর্ণরূপে শ্রম বিনিময় বন্ধ করে দেব।
প্রয়োজনে না খেয়ে মরব, তবু ঐপুশুদের লাথি খেয়ে মরতে চাই না। মনে রাখবেন
আমাদের এই আন্দোলন কখনই বৃথা যাবে না। (মিছিল শুরু হবে)।
এমন সময় মিছিলে পুলিশ হামলা চালাবে। কয়েক জন শ্রমিক শহীদ হবে, বাকীরা
এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে।
[এমন সময় সনি কনষ্ট্রাকশন এর মালিক আফতাব এর প্রবেশ]

আফতাব ঃ শালা লেবারের বাচ্চা 'আন্দোলন
করে দাবী আদায় করবে? শালা ছোট লোকের জাত।
(ব্যস্ত ভাবে মঞ্চে পায়চারী করতে থাকবে)।
ম্যানেজার শালাকে সেই কখন ফোন করলাম। ব্যাটার এখনও দেখা নেই।
(এমন সময় ব্যস্ত ভাবে মঞ্চে ম্যানেজার এর প্রবেশ)

ম্যানেজারঃ স্যার..... স্যার, সর্বনাশ হইয়া গেছে।

আফতাব ঃ কি সর্বনাশ হইল ম্যানেজার?

ম্যানেজারঃ স্যার, মিছিলে পুলিশের গুলিতে অনেক শ্রমিক মারা গেছে।

আফতাবঃ কত লেবার মারা গেলে?
ম্যানেজারঃ প্রতক্ষ্য দর্শীরা জানান ৪০/৫০ জন হবে হয়তো।

আফতাবঃ এত অল্প লেবার মরবে কেন? অনেক
লেবার ইতো মরার কথা। এ নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হবে না। আমি ওদের কাজ না
দিলে এমনিতেই ওরা না খেয়ে মারা যাবে। সেখানে পুলিশের হাতে মরেছে। (অন্য
দিকে তাকিয়ে)। আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম। ম্যানেজার তুমি, আমি মারলে ক্ষতি
পূরণ দেওয়া লাগত। পুলিশ মেরেছে তাই বেঁচে গেলাম। ওরা এখন পুলিশের উপর
ক্ষিপ্ত হবে। পুলিশ আবারও ওদের পেটাবে। এবার দেখবে খেলা। কাজ বন্ধ, বেতনও
বন্ধ। (হাসি হাসি কন্ঠে)। সেই সাথে বাজার ও বন্ধ। (ক্ষুব্ধ কন্ঠে বন্ধ
হয়ে গেছে ওদের মুখের খাবার)। আমিও দেখব শালা লেবারের বাচ্চা না খেয়ে
কতদিন আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে আর পুলিশের মার খেতে পারে।

ম্যানেজারঃ স্যার, এত বুদ্ধি আপনের মাথায়।
সাপ মারলেন অথচ লাঠি ভাংলেন না।

আফতাবঃ এই জন্যই আমরা মালিক তোমরা কর্মচারী।
তুমি দেখে নিও। এসকল খুনের দ্বায় অবশ্যই পুলিশকে নিতে হবে। কারণ আদালত
চায় প্রমাণ। আমি তো গুলি করে কাউকে খুন করি নি। (হাসতে হাসতে) । গুলিতো
করেছে পুলিশ। ঐ বন্ধুকে আমার তো কোন হাতের ছাপ নাই। ছাপ থাকলে আছে
পুলিশের। এবার ম্যানেজার তুমিই বল- আমি দোষী, না নির্দোষী।

ম্যানেজারঃ স্যার, আপনার দোষ দিবে কোন শালায়। মাল দিবেন আপনে, কাম করবে
পুলিশ, মরবে শ্রমিক। এক্ষেত্রে আপনি স্যার সম্পূর্ণ নির্দোশ।

আফতাবঃ তাইলে তুমি ঠিকই ধরেছ ম্যানেজার। তুমি এদিকটা সামলাও। আমি গিয়ে
দেখি শালা লেবারের বাচ্চারা কি করছে (প্রস্থান)।
ম্যানেজারঃ (একটু পিছু ধরে দেখবে) হাসি হা.. হা... হা .. স্যার, আপনের
সকল কু-কর্মের একজন স্বাক্ষী কিন্তু আছে। তাকে ম্যানেজ করুন। তা নাহলে
আপনিও ধরা পরে যাবেন। এই আমি মুখ খুললে আপনার পায়ের তলার মাটি থাকবে না।
তবে আমি এত বোকানা যে, এত তারাতারি সব বলে দেব। আগে নিজের আখেরটা একটু
গুঝিয়ে নেই তারপর দেখব 'কতধানে কতচাল, আন্দোলন করবে শ্রমিক, টাকা দিবে
মালিক , গুলি করবে পুলিশ, আমি শুধু বসে বসে তামাশা দেখব। (হাসতে হাসতে
প্রস্থান)।
শ্রমিক নেতা রেজার প্রবেশ

রেজাঃ এতগুলো শ্রমিক মারা গেল অথচ..........
(আফতাব এর প্রবেশ)

আফতাবঃ কারই যেন কোন মাথাব্যাথা নেই।
এই তো রেজা সাহেব? (রেজা আফতাবের দিকে তাকিয়ে থাকবে)। শোনেন রেজা সাহেব
বেশী আন্দোলন সংগ্রাম করে কোন লাভ নেই। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান।
অন্যথায় রেজাল্ট হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। (রেজা অন্য দিকে তাকিয়ে শুধু শুনবে)
বুঝতে পারছেন তো রেজা সাহেব। গত কাল এতগুলো শ্রমিক মারা গেল কৈ কোন
প্রতিবাদ আছে, কে করবে প্রতিবাদ বলেন। প্রতিষ্ঠান আমার। দাবী দাওয়া করলে
আমার কাছে করবেন। মানা না মানা আমার এখতিয়ান। তানা করে শ্রমিকরা মিছিল
করছে রাস্তায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের সাথে। ঘুলি করেছে পুলিশ। মারা গেছে
শ্রমিক এখানে আমার দোষ কোথায়। অথচ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে আমার
কোম্পানির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।এবার আপনিই বলেন,আমি যদি ওদের কাজ
বন্ধ করে দেই,তবে ওরা যাবে কোথায় ? খাবেকি? তাই বলছিলাম আন্দোলন সংগ্রাম
বন্ধ করে শ্রমিকদের নিয়ে কাজে নেমে পরুন । কথাটা মনে রাখবেন ।(প্রস্থান)

রেজা ঃ আর কত দিন এভাবে চলবে মালিক ,এই অসহায়
গরিব মানুষ গুলো কি কোন দিনই তাদের ন্যায্য অধিকার পাবেনা ?নাকি আজিবন
তারা মালিক পক্ষের দায়ের তলার মাছ হয়ে থাকবে ? গরিব কিংবা শ্রমিক হয়ে
জন্ম নেয়া কি তাদের অপরাধ ? (রতœার প্রবেশ)

রতœা ঃ অপরাধ নয় অপরাধ নয় বলেন শ্রমিক হয়ে জন্ম নেয়া , এজেন আজন্ম পাপ বুঝলেন ?

রেজা ঃ কে আপনি ?

রতœা ঃ চিনবেন না সনি কনস্ট্রকশনের মাধিক আবতাব চৌধুরীর এক মাত্র কন্যা
রতœা আমার নাম।

রেজাঃ আপনি-ই ,তাহলে রতœা চৌধুরী?

রতœাঃ জি হ্যা, কেন সন্দেহ আছে?

রেজাঃ না........ সন্দেহ থাকবে কেন? আমি
(মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে)

রতœাঃ থাক থাক আর বলতে হবে না। আমি জানি আপনি হলেন সহি কনেষ্ট্রাকশনের
শ্রমিক নেতা রেজা মিয়া। কি ভুল বলিনিতো?

রেজাঃ না, না আপনি ঠিকই ধরেছেন। তবে নেতা হয়ে
লাভ কি বলেন? যদি শ্রমিকের অধিকার আদায়
করতে না পারলাম।

রতœাঃ অধিকার! অধিকার!! অধিকার!!! (ক্ষিপ্ত মেজাজে) অধিকার কাকে বলে?
আপনি কি জানেন।

রেজাঃ আপনি কি মনে করেন? আমি বোকার স্বর্গে
বাস করছি? যে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমার এতগুলো শ্রমিক মারা গেল, আর আমি
অধিকার চিনব না? চৌধুরী যে ভাবে অসহায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে
ছিনিমিনি খেলছেন আগামী ০১সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকের সকল দাবী দাওয়া মেনে না
নিলে এমন সময় অপক্ষো করছে যে, শুধু শ্রমিক আন্দোলনের সুখে এই বিশাল
অট্টালিকার প্রতি ইট এক একজন ইস্পাত..... শ্রমিক হয়ে এর কৈফিয়ত তলব করবে।
সেই দিন ঐ ধ্বংস স্তুপের মধ্যে থেকে হাত ধরে টেনে তুলবার মত কোন লোক খুজে
পাবে না।

রতœাঃ (হাতে তালী দিতে দিতে) সাবাস! রেজা সাহেব সাবাস। আমি এ কথাটি আপনার
মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম। আমার বাবার মত নর-পিচাসদের ছোবল থেকে অসহায়
শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে আমিও আপনাদের পাশে থাকবো।

রেজাঃ কি বলছেন, আপনি .......................

রতœাঃ কোন ভুল বলিনি, যা সত্যি আমি তাই বলেছি মাত্র।

রেজাঃ তাই বলে .........আপনি পিতার বিরুদ্ধে যাবেন?

রতœাঃ এনিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। যে বাবা নিরিহ
অসহায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, যে বাবা নিজের
স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মানুষ খুনের মত জগন্য পাপ কাজ করতে পারে, তাকে আর
যাই বলেন, ঘৃনা করা যায়, বাবা ডাকা যায় না। আপনি কোন ভয় পাবেন না। আমি
আছি আপনার সাথে। (প্রস্থান)।

রেজাঃ এটাই আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ, এ সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না।
যাই ঐদিকে গিয়ে একটা মিছিল আয়োজন করি। প্রস্থান।

স্থানঃ- থানা কমপ্লেক্স অসি নিয়াজ চেয়ারে বসা থাকবে, আবতাবের প্রবেশ।

আবতাব ঃ- ভিতরে আসতে পারি.............?

নিয়াজ ঃ- আরে আবতাব সাহেব যে ,আসুন আসুন, আমার কি সৌভাগ্য বলুতো ,এযেন
গরিবের দুয়ারে হাতির পাড়া।তা কি মনে করে চৌধুরী সাহেব বলুনতো?

আবতাব ঃ- আরে না না ,তেমন কিছুনা ,ভাবলাম অনেক দিনইতো আপনার সাথে দেখা
সাক্ষাৎ নাই,তাই একটু চা খাইতে আসা।

নিয়াজ ঃ-তা আবতাব সাহেব কোম্পানীর ব্যবসা বানিজ্য কেমন চলছে ?

আবতাব ঃ- আর বলবেন না ভাই , শালা লেবারের বাচ্চারা যে ভাবে আন্দোলন
সংগ্রাম করেছে ,তাতে আমার কোম্পানী একে বারে লাডে ওঠার উপক্রম হয়েছে।
শালাদের একটু টাইট দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য যা লাগে আমি দেখবো।

নিয়াজ ঃ আফতাব সাহেব আপনাদের মতিগতি বোঝা বড়ই দুস্কর। কারণ আপনাদের
প্রয়োজনের সময় অনেক কিছুই দিয়া দেন। আর প্রয়োজন ফুরালে পুলিশ ঘুষ খায়।
আপনাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে? কোন লোক থানায় কোন অভিযোগ নিয়া
আসলে করোজোড়ে মিনতি স্যার আমার বিষয়টি খুবই জরুরী, নেন এটা আপনার জন্য
একটু চা,পানের ব্যবস্থা রেখে গেলাম। পরক্ষনে ঐলোকটিই আবার বলে বেড়াল
পুলিশ কে টাকা দিয়ে তোর মামলা খেয়ে ফেলেছি। এই যদি হয় আপনাদের
মন-মানসিকতা তবে কেমনে আপনার প্রটেকশনের জন্য পুলিশ যাবে। তাবে হ্যা,
সমস্যা হলে পুলিশ প্রটেকশন দিবে,এটা তার দ্বায়িত্ববোধ থেকে আপনার টাকার
উপর ভর করে না। মনে রাখবেন। বেশী কিছু আশা করা অত ভাল নাও হতে পারে।

আবতাব ঃ- তাহলে আমি আসি "আসসালামু আলাইকুম" প্রস্থান।

নিয়াজ ঃ বেটা চৌধুরীর বাচ্চা, টাকা দিয়া পুলিশ কিনতে চায়, চৌধুরী
অপেক্ষায় থাকেন ,দেখেন কোথার পানি কোথায় গড়ায়। (প্রস্থান)।
(মিছিল ...... রেজা দলবল নিয়ে মঞ্চে আসে একই মিছিলে একবার রেজা একবার
রতœা নেতৃত্ব দেবে। তাতে দুইটা মিছিল মনে হবে। পুলিশ মিছিলে লাঠি চার্জ
করবে। মিছিলটি একপর্যায় ছত্রভ্গং হয়ে পড়বে। দৌড়ে রেজা মঞ্চে প্রবেশ)

রেজাঃ হে বিধাতা আমরা শ্রমিকরা আর কত দিন এভাবে
রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম করব? আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে আর
কত রক্ত ঝড়াবো? তোমার আশরাফুল মাকলুকাত নামের শ্রেষ্ঠ মানব সন্তানেরা কবে
আত্ম শুদ্ধি হবে? কবে তারা নিজেদের অবৈধ স্বার্থ দিদ্ধির জন্য পরার্থ হরণ
থেকে বিরত থাকবে? কেন ঐসকল শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে
নির্যাতনের স্বীকার হবে? কেন তাদের কষ্টার্জিত পাওনা টাকার জন্য লাশ হয়ে
ঘরে ফিরবে? কেন? কেন? কেন? (কন্নায় ভেঙে পড়বে রেজা, এমন সময় ব্যাগরাউন্ডে
বলবে রেজা)

রতœাঃ রেজা, উৎকন্ঠার আবেগ দিয়ে আর যাই হোস, যুদ্ধে
জয় করা যায় না। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাই অস্ত্রের যনযনানী, চোখের পানি নয়।
দাড়াও রেজা, উঠে দাড়াও, নিজেকে শক্ত কর। প্রতিবাদ কর, অন্যায়ের বিরুদ্ধে
রুখে দাড়াও শত্র"র সামনে, প্রতিশোধ নাও, প্রতিশোধ নাও রেজা, প্রতিশোধ
নাও। আমি রতœা বলছি উঠে দাড়াও, উঠে দাড়াও রেজা। (রেজা আস্তে আস্তে উঠে
দাড়াবে, ব্যগ্র হুংকারে গর্জে উঠবে)

রেজাঃ নারয়ে তাকবির, (ব্যাগরাউন্ড থেকে সাউন্ড আসবে)
আল্লাহু আকবর। দুনিয়া মজদুর (ব্যাগরাউন্ড থেকে সাউন্ড আসবে) একহও, একহও,
লড়াই কর। (আতঙ্কিত হবে রেজা, চারদিকে ছুটাছুটি করতে থাকবে) কে কে কারা
তোমরা কারা তোমরা মিছিল দিচ্ছ, বেরিয়ে আস, বেরিয়ে আস, আমি রেজা বলছি,
বেরিয়ে আস, প্রতিবাদ কর অন্যায়ের, রুখে দাড়াও, শত্র"র সামনে। আদায় কর
নিজের অধিকার। (এ সময় রতœা মিছিল নিয়ে মঞ্চে আসবে, দুইজন একই সাথে মিছিল
করবে, পুলিশ গুলি করবে, রতœা ও রেজা দুইজনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে
লুটিয়ে পরবে, অন্যারা সবাই ছুটাছুটি করতে থাকবে, রতœা রতœা ডাকতে ডাকতে
মঞ্চে আসবে আফতাব চৌধুরী কন্যার মৃৃত্যুদেহ দেখে লাশের পাশে বশে পরবে
আবতাব, এমন সময় করুন মিউজিক বাজতে থাকবে, গান গাইবে বাউল- "মানুষ হয়ে
দিসনে ব্যাথা মানুষের মনে, মরলে সবাই হবে মাটি একই শশ্বানে/কবর)

আফতাবঃ এ তুই কি করলি রে মা, আমি যা কিছু করে
ছিলাম সবই তো তোর সুখের জন্য। কেন? আজ তুই ভুল বুঝে আমার বুকটারে খালি
করে, একা চলে গেলি। এখন কে খাবে আমার এই বিষয় সম্পত্তি। আমি কার জন্যে
শ্রমিকদের ঠকিয়ে সম্পত্তির পাহাড় গড়ে ছিলাম। রতœা, কথাবল মা কথা বল, চেয়ে
দেখ আমি তোর বাবা আফতাব চৌধুরী, (উম্মাদের মত প্রশ্ন করতে থাকবে) মা রতœা
তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস, আমার কার্যকলাপে তুই কি অসন্তুষ্ট, কই তোকে
তো কোন দিন আমার সাথে রাগ করতে দেখি নি। তুমি বল মা আজ তুই যা চাবি আমি
তোকে তাই দেব। (গায়ে মাথায় হাত বুলাবে) বল মা তুই কি চাস, (এমন সময়
দৃষ্টি পড়বে রেজার দিকে) রেজা, উঠে দাড়া রেজা, তুইও আমার উপর অভিমান
করেছিস, আমি তোকে কত ভুল বুঝে ছিলাম। আমি যার জন্য স্বপ্নের পাহাড় গড়তে
চেয়েছি সেই রতœাই যখন নেই, তখন আমার আর এ সম্পদ দিয়ে কি হবে। ওঠ রেজা ওঠ,
আমি তোর মালিক আফতাব চৌধুরী বলছি শ্রমিকদের নিয়ে কাজে যা রেজা , কতদিন
আমার ফ্যাক্টরীটা বন্ধ হয়ে আছে, উৎপাদন না থাকলে দেশ চলবে কেনে বল । রাখ
করিনে রেজা উঠ ....রেজা উঠ। আজ তোর মত শ্রমিকের যে বড় দরকাররে রেজা তোর
মত শ্রমিকের যে বড় দরকাররে রেজা। তুই না থাকলে আমার এতবড় বিশাল
কনষ্ট্রাকশন কে দেখবে বল? আজ থেকে তোদের সকল দাবী আমি মেনে গেলাম, আমি
হেরে গেলাম রেজা, আমি হেরে গেলাম। আরে তোরা কে কোথায় আছিস যলদি বিজয়
মিছিলের আয়োজন কর। (মিছিল চলতে থাকবে, আস্তে আস্তে মিছিলের শব্দ মেলান
হতে থাকবে, মঞ্চের বাতি নিবে যাবে )
যবনিকা